Ashraf’s Column

Tuesday, August 13, 2013

Corruption and women

Bangladesh is already well known as a corrupt country. It’s because most of its powerful and influential men and women, within and outside the government, practice corruption as a way of life. Sometimes we find names of such allegedly corrupt persons published by the media, though most of the time these people manage the corrupt owners of the media and go unnoticed. What is surprising is that we seldom find names of the women among the corrupt people. Very recently we found the name of only one woman who is allegedly corrupt. She is Mrs. Jasmine, wife of Hallmark boss Mr. Tanvir. Does that mean that the women in our society are all “dhoa tulshipata” (innocent)? Certainly not. I am sure, an intimate study of the corrupt men, will prove that, if not more, at least 95% of them indulge in corrupt practices at the behest of their wives and, in some case, their mothers. In our society we find most of the working and non working women, especially the well to dos, want to live their life as luxuriously as possible. We see them in a rat race for more money and more power. They take a kind of perverted pleasure in living beyond means. They suffer from a mental disease called exhibitionism and are fond of showing off their expensive houses, cars, dresses, ornaments etc. If these women could be motivated to live within their means, if the society could openly question and condemn such exhibitionism, I believe, their men folk would not have run after unearned and ‘haram’ (forbidden by religion) income to meet their wives’ insatiable greed. But the question is: How to motivate these highly ambitious and exceedingly greedy women and bring them to the path of modest living within the means? I have two humble suggestions. Firstly, women organizations of our country can initiate movements to make the women aware of the far reaching ill effects of corruption on their families and on the society as a whole. They can tell the women that every married woman must prevail upon her husband or son to refrain him from acquiring wealth by illegal means by taking bribe or indulging in dishonest business. She must tell her husband or son that she is happy with his honest income; even if it causes her financial hardship. She can also tell her husband that it will never be good for their children if they are brought up with ‘haram’ money. Moreover, when these children will grow up and learn that their father was a corrupt man they will have no regard for the father. Can we expect to see our senior female social workers starting a movement in this line, or in a better line, by addressing our women, especially the ones who are still students and not married, through media, meetings, seminars and symposia? Secondly, the wife of a corrupt man should be made a co-accused as an abettor in a corruption case. She may be acquitted by the court if she can prove that she tried her best to refrain her husband from making money by corrupt means. But the husband must be punished if found guilty. If necessary the existing relevant laws may be amended to involve the wife of a corrupt man in such cases. Before I conclude I must make it clear that I do not write this piece to absolve the corrupt men of their crimes. Under all circumstances they must be punished as per law. They must be condemned by the society every time and everywhere. We don’t any more want to see such persons selected or elected as the chairmen of the local masjid committees or the school committees, not speak of members of the parliament. Let us have the active support of our mothers and sisters to combat corruption.

Wednesday, August 07, 2013

ঘুসখোরদের জন্য

আমাদের সমাজে বর্তমানে ঘুস একটি মহাসংক্রামক ব্যাধি হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারি-বেসরকারি যেকোনো অফিস বা প্রতিষ্ঠানে ঘুস ছাড়া কোনো কাজ হয় না। দাতা কিংবা গ্রহীতা কেউ আর আজকাল ঘুস দেওয়া-নেয়াকে অবৈধ বা অনৈতিক কাজ মনে করেন না। যদিও কাজটি যে কোনো বিবেচনায় যে অবৈধ এবং অনৈতিক তা সকলের জানা আছে। আমার নিজের জীবন থেকে ঘুস সম্পর্কিত দু’টি অভিজ্ঞতার কথা নিচে বর্ণনা করছি। যাঁরা নিশ্চিন্ত মনে এখনও ঘুস খেয়ে চলছেন, বা যাঁরা ভবিষ্যতে ঘুস খাবার পরিকল্পনা করছেন তাঁরা কথাগুলো ভেবে দেখতে পারেন। ১৯৮১ সালের ঘটনা। আমি ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছি। কোনো একটা ভ্যাকেশনের পর ক্যাডেটরা সবে কলেজে ফিরে এসেছে। এমন সময় একজন হাউস মাস্টার, যিনি একটি হাউস বা ছাত্রাবাসের প্রায় এক’শ জন ক্যাডেটের সার্বক্ষণিক দেখভালের দায়িত্বে নিয়োযিত থাকেন, এসে এমন এক খবর দিলেন যা আমাকে ভীষণ চিন্তায় ফেলে দিলো। তিনি বললেন, তাঁর হাউসের ক্লাস এইটের একজন ক্যাডেট, যার বয়স ১৪ বা ১৫ বছর হবে, বাড়ি থেকে ফিরে এসে এই বলে ঘোষণা দিয়েছে যে, পরবর্তী ভ্যাকেশনে সে আর কখনও বাড়ি যাবে না। জোর করে বাড়ি পাঠালে সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাবে, নয়তো আত্মহত্যা করবে। তার থাকার জন্য কলেজে অথবা কলেজের পক্ষ থেকে অন্য কোথাও থাকার ব্যবস্থা করা হোক। লম্বা ছুটিতে সব ক্যাডেট বাড়ি যাবার জন্য উদগ্রীব থাকে। অথচ সে জিদ ধরেছে বাড়ি যাবে না। কেনো যাবে না, সে প্রশ্নের উত্তরও হাউস মাস্টার বহু চেষ্টা করে বের করতে পারছেন না। হাউস মাস্টারের ধারণা, বাড়িতে এমন কিছু বিব্রতকর বা লজ্জাজনক ঘটনা ঘটেছে যার জন্য সে আর বাড়িতে যেতে চায় না। ঘটনাটি সে কারও কাছে প্রকাশও করতে চায় না। সহযবোধ্য কারণে ছেলেটির আসল নাম প্রকাশ করছি না। ধরা যাক, তার নাম কামাল। সাধারণত জটিল কোনো সামাজিক সমস্যা থেকে কামালের মত বয়সী ছেলেরা ( এবং মেয়েরা) এমন অস্বাভাবিক আচরণ করে থাকে। যার উপর আস্থা আছে কোনো মুরুব্বি সঠিকভাবে হস্তক্ষেপ করতে ব্যর্থ হলে এমন আচরণের পরিণতি মারাত্মক হতে পারে। কথাটা আমার জানা ছিলো। শোনার পর দিনই বিকেলে গেইমস পিরিয়ডে কামালকে আমার অফিসে ডেকে আনি। অফিসে আর কেউ না, শুধু কামাল আর আমি। একথা-সেকথা বলার পর পরিবেশ কিছুটা হাল্কা হলে তার বাড়ি না যাইতে চাইবার প্রসঙ্গটি উঠালাম। বিষয়টি খোলাখোলিভাবে বলার জন্য অনুরোধ করলাম। সম্পূর্ণ গোপনীয়তার নিশ্চয়তা দিলাম। তাকে আরও বললাম, বিষয়টি কারও সাথে সেয়ার না করে একাএকা মনের মধ্যে চেপে রাখলে তার মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে। পড়াশুনার ক্ষতি হবে। রেজাল্ট খারাপ হবে। আমি তার একজন বন্ধু হিসেবে, একজন হিতাকাঙ্খী হিসেবে তাকে পরামর্শ দিতে চাই। তার সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে চাই। অবশেষে কামাল মুখ খুললো। সে বললো, তার বাবা একজন সরকারি অফিসার। এমন একটি প্রচন্ড বদনাম আছে। তার বিশ্বাস, তার বাবাও ঘুস খান। এবং প্রচুর পরিমানে ঘুস খান। ঠিকাদাররা বাসায় এসে তার বাবা বা মা’র হাতে ঘুসের টাকা ও অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে যান। ব্যাপারটা সে ছুটিতে বাসায় থাকার সময় লক্ষ্য করেছে। তার মা প্রতি মাসে প্রায় বিশ হাজার টাকা সংসারের জন্য খরচ করেন, প্রতি মাসে দামিদামি শাড়ি কেনেন। অথচ তার বাবার মাসিক বেতন সব মিলিয়ে ছ-সাত হাজার টাকার বেশি নয়। দাদা-নানারাও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের লোক। সেখান থেকেও কোনো টাকাপয়সা পাবার কথা নয়। এক পর্যায়ে সে বলে ফেললো, আই হেইট মাই ফাদার। আমি ছুটিতে আর বাড়ি যাবো না। বাবার ঘুসের টাকায় কেনা ভাত আর খেতে চাই না। বাড়ি গেলে আমাকে হারাম খেতে হবে। সমস্যা জটিল, সন্দেহ নাই। কোনো মসজিদে অথবা মজলিসে ঘুসখোরদের সম্পর্কে নিন্দনীয় কথা শুনে, অথবা বইতে পড়ে সে আর নিজেকে স্থির রাখতে পারেনি। তার বাবাকে, সেইসাথে মাকেও, ঘৃণা করতে শুরু করে। তাঁদের কাছে আর সে যেতে চাইছে না। পরের দিন আবার একই সময়ে আমার অফিসে আসতে বলে সেদিনের মত কামালকে তার হাউসে ফিরে যেতে বললাম। পরের দিন গেইমস পিরিয়ডে কামালকে আবার আমার অফিসে ডেকে এনে নিভৃতে আলাপ শুরু করি। প্রথমেই তাকে আশ্বস্ত করলাম এই বলে, বিষয়টি নিয়ে আমি নিজে অনেক চন্তা করেছি। ধর্ম, আইন এবং নৈতিকতা সম্পর্কে যাঁদের অনেক জ্ঞান আছে এমন কয়েকজন পন্ডিত ব্যক্তির সাথে আলাপ করেছি। তাঁদের সবার একমত, তোমার বাবা ঘুষ খেয়ে, এবং তোমার মা সে ঘুষের টাকা উড়িয়ে অবশ্যই গুনাহ এবং অন্যায় দু’টোই করছেন। তবে সেজন্য তোমার বা তাঁদের অন্য কোনো সন্তানের কোনো গুনাহ বা অন্যায় হবে না। তোমাকে যথাসাধ্য ভালোভাবে লালনপালন করা তাঁদের পবিত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য। একাজের জন্য তাঁরা সত্ না অসত্ উপায়ে অর্থ উপার্জন করলেন, তার জন্য সন্তান হিসেবে তোমার কাছে কোনো কৈফিয়ত চাওয়া হবে না। তাই, ভ্যাকেশনে বাড়ি গিয়ে বাড়ির ভাত খেতে, বাবা-মার দেওয়া কাপড় পরতে তোমরি আপত্তির কোনো কারণ নেই। বরং বাবার ঘুষ খাওয়া এবং মায়ের অর্থ অপচয় করা যে তুমি পসন্দ করো না তা বিনয়ের সাথে কোনো প্রকার বেয়াদবি না করে বাবা-মাকে বলতে পারো। যদি তাঁরা তোমার কথা শোনেন, তবে ভালো। আর যদি না সোনেন, তাহলে এ নিয়ে বাবা-মার সাথে কোনো সংঘাতে যাবে না। তাহলে তাঁরা হয়তো তোমার ক্যাডেট কলেজে পড়াই বন্ধ করে দেবেন। কাজের কাজ কিছু হবে না। মাঝখান থেকে তোমার মত সত্ এবং ঈমানদার একজন মানুষের ভবিষ্যত সেবা থেকে আমাদের দেশ বঞ্চিত হবে। তারচেয়ে বরং ভালোভাবে লেখাপড়া শেষ করে যে পেশাতই যোগ দাও না কেনো, সকল প্রকার দুর্নীতি ও লোভ-লালসা থেকে নিজেকে রক্ষা কোরো। অধ:স্তনদেরকেও ওপথে হাটতে দিও না। নিজের বাবা-মার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করো, আল্লাহ যেনো তাঁদের হেদায়েত করেন। মৃত্যু হলে যেনো অল্লাহ তাঁদের, তোমার অর্জিত নেকির বদলে, গুনাহ মাফ করে দেন। যতক্ষণ কথা বলছিলাম, আমি কামালের মুখের দিকে তাকিয়ে তার ভাবান্তর লক্ষ্য করছিলাম। মনে হলো, আমার কথায় কাজ হচ্ছিলো। যাবার সময় দু’চোখের কোনায় অশ্রুর রেখা দেখেছিলাম। বুঝতে পারিনি, সে অশ্রু আনন্দের না বেদনার। ক’দিন পর ভ্যাকেশন শুরু হলে কামাল আর কোনো কথা না বলে বাড়ি চলে যায়। তারপর বহুদিন হয়ে গেছে। কামাল কোথায় কী করছে জানি না। আমার বিশ্বাস, সে ঘুষ খায় না, সে ভালো আছে। যদি বেঁচে থাকি, আল্লাহ চাইলে, বাংলাদেশে অথবা দেশের বাইরে কোথাও, দেখা হলে দৌড়ে এসে পা ছুঁয়ে বলবে, স্যার, আমাকে চিনলেন না, আমি কামাল। আমি আপনার কথা রেখেছি। আমি ভলো আছি, সত্ আছি। যেমন করে অনেকদিন আগে কলকাতা ডেপুটি হাই কমিশনের সামনে দৌড়ে এসে আমায় কদমবুচি করে মইনুল (আসল নাম নয়) বলেছিলো, স্যার, আমাকে চিনলেন না ! আমি আপনার ক্যাডেট মইনুল, যাকে আপনি অপরাধ করার জন্য ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ থেকে বের করে দিয়েছিলন। ক্যাডেট কলেজ থেকে বের করে দিয়ে আপনি আমার ভীষণ উপকার করেছিলেন। না হলে আমার মধ্যে যে দোষ ঢুকেছিলো তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারতাম না। ক্যাডেট কলেজ থেকে বের হয়ে এসে পৃথিবীকে নতুন করে চিনলাম। নতুন করে চৈতন্য হলো। থাক সে কাহিনী আজ। আর এক দিন বলা যবে। এবার আসা যাক দ্বিতীয় ঘটনায়। ঘটনাটি ঘটেছিলো ১৯৮০ সালের প্রথম দিকে, যখন আমি সবে ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে অধ্যক্ষ পদে যোগ দিয়েছি। আমাদের বড় ছেলে রুমনের বয়স তখন মাত্র দশ হয়েছে। ক্লাশ ফোরে পড়ে। হঠাত্ সে একদিন তার মার কাছে বায়না ধরলো, ছোট মাছের তরকারি, শাকপাতা ভাজি, ভর্তা, ডাল, এসব দিয়ে তার ভাত খেতে আর ভালো লাগছে না। তাকে এখন থেকে প্রতি বেলায় গরু-মুরগি-খাসি বা বড় মাছের ঝোল দিয়ে খাবার দিতে হবে। তা নাহলে সে ভাত খাবে না। বিষয়টি আমার স্ত্রী আমাকে জানালেন। তাঁকে এনিয়ে ছেলেরে সাথে কথা বলতে বারণ করলাম। যা বলার আমি নিজেই বলবো। খবর নিয়ে জানা গেলো, ষড়যন্ত্রের মূল হোতা বাসার বুড়ো সরকারি বাবুর্চি আকবর মিয়া। ছোট মাছের তরকারি, শাকপাতা ভাজি, ভর্তা, ডাল, এসব রান্না করতে তার ভালো লাগছে না। তাছাড়া এসব পাকাতে সময় বেশি লাগে। কাজ শেষে তার নিজের বাসায় ফিরতে দেরি হয়। অন্যদিকে আমি পদ্মাপাড়ের ছেলে। ছোটবেলায় মা যা রান্না করে খাইয়েছেন সেসব খেতে এখনও ভালো লাগে। তাছাড়া সরকার যা বেতন দেয় তা দিয়ে সপ্তাহে দু’একদিন হয়তো বড় মাছ বা গোস্ত দিয়ে ভাত খেতে পারি, প্রতিদিন তো নয়। মনে মনে ঠিক করলাম, ছেলেকে বুঝাতে হবে। যে ভাষায় বললে সে ভালোভাবে বুঝবে সে ভাষাতে বলতে হবে। মিলিটারি কায়দায় ‘নো’ বললে কাংখিত ফল পাওয়া যাবে না। বরং ছেলেটি মনে আঘাত পাবে। পরের রবিবার, তখন রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি হতো, নাস্তার টেবিলে রুমনের সাথে কথাটা উঠালাম। ওর আম্মাও সামনে ছিলেন। সহজ ভাষায় ছোটছোট প্রশ্নোত্তরের সাহায্যে ওকে বিষয়টি এভাবে বুঝাবার চেষ্টা করলাম: শুনলাম, ছোট মাছের তরকারি, শাকপাতা ভাজি, ভর্তা, ডাল, এসব খেতে তোমার আজকাল ভালো লাগছে না। তোমার আম্মাকে বলেছো প্রতিদিন গোস্ত বা বড় মাছের তরকারি দিতে। জ্বী। তুমি জানো, গোস্ত, মাছ, শব্জি এসব কোথা থেকে, কেমন করে আমাদের খাবার টেবিলে আসে ? শুক্কুর ভাই (বেয়ারার) বাজার থেকে টাকা দিয়ে কিনে আনে। শুক্কুরকে কে বাজার করার টাকা দেয় ? আম্মা টাকা দেন। আম্মা কোথায় টাকা পান ? কেনো, তুমি টাকা দেও, তোমার বেতন থেকে। আমি কি বেহিসাবি অনেক টাকা বেতন পাই ? নাকি, নির্দিষ্ট পরিমানে কিছু টাকা পাই ? তোমার কী মনে হয় ? নির্দিষ্ট পরিমানে টাকা পাও। তুমি কি জানো, সে টাকা কিসেকিসে খরচ হয় ? না, জানিনা। আমাদের সবার খাওয়াদাওয়া, জামাকাপড়, তোমার বই-খাতা-পেন্সিল, ছোট চাচা-ফুফুদের পড়াশুনা, চিকিত্সা ইত্যাদি অনেক কাজে খরচ হয়। প্রতিদিন বেশিবেশি গোস্ত-মাছ ও দামিদামি খাবার খেতে হলে অতিরিক্ত টাকা লাগবে। সে টাকাটা কোথায় পাবো ? কম খরচ করে অন্য খাত থেকে টাকা বাঁচিয়ে এনে খাওয়াদাওয়ার জন্য ব্যয় করা যায়। তুমি বলো, কোন খাতে কম খরচ করা যায়। অনেক্ষণ চুপ থেকে বললো, আমি জানি না। মনে হলো, জমি এবার তৈরি হয়েছে। আমাকে এখনই ওর মনে সততার বীজ বুনতে হবে। আমি বললাম, হ্যাঁ, একটা উপায় আছে। আমি যদি চুরি করি তা’হলে অনেক টাকা উপার্জন করতে পারবো। (ঘুষ কথাটার অর্থ ও তাত্পর্য তখন ওর জানার কথা নয়। তাই ঘুষের বদলে চুরি বলেছিলাম।) তখন আর আমাদের কোনো অভাব থাকবে না। যা খুশি তাই আমরা খেতে পারবো। কিন্তু, মনে করো, তুমি একদিন ফৌজদারহাট বাজারে গেলে। তোমাকে ওখানকার কেউ চিনে না। এমন সময় তুমি শুনতে পেলে, কেউ একজন বলছে, ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের প্রিন্সিপ্যাল কর্নেল আশরাফ একটা মস্ত চোর। সে মানুষের টাকা চুরি করে। তখন তোমার কেমন লাগবে শুনতে ? সাথেসাথে রুমন চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেলো। চিতকার করে যা বলেছিলো, তা আজও আমার পরিষ্কার মনে আছে। সে বলেছিলো, না আব্বা না, তুমি কখনও চুরি করবে না। আম্মা যা টেবিলে দিবেন, তাই খাবো। এরপর রুমন এবং ওর ছোট দু’ভাইবোনকে কোনো দিন এটা খাবো না, ওটা খাবো না বলে বায়না ধরতে শুনিনি। হোটেল-রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে খাবার নিয়ে বায়না ধরেনি। ওদের মা যা খাবারের অর্ডার দিয়েছেন তাই সানন্দে খেয়েছে। তিনচার বছর পরের ঘটনা। রুমন সম্ভবত তখন ঢাকার আদমজী ক্যন্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে ক্লাশ সেভেনে পড়ে। একদিন ওর মা লক্ষ্য করলেন যে সে পা খুড়িয়েখুড়িয়ে হাটছে। ভাবলেন, হয়তো স্কুলে খেলতে সময় পড়ে গিয়ে পায়ে আঘাত পেয়েছে। দেখার জন্য কাছে ডাকলেন। রুমন বললো, না, তমেন কিছু নয়। দু’তিন পর ওর মা জোর করে কাছে বসিয়ে যা দেখলেন তাতে যেকোনো মায়ের মন ব্যথায় ভরে উঠার কথা। জুতা ছোট হয়ে গেছে। দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে গোড়ালিতে ফোষ্কা পড়ে ঘা হয়ে গেছে। মা প্রশ্ন করলেন, জুতা পায়ে লাগছে না, একথা কেনো এতোদিন বলিস নি ? ছেলের জবাব, এখন তো মাসের মাঝামাঝি। আব্বার হাতে যদি টাকা না থাকে। তাই অব্বাকে বিব্রত করতে চাইনি। আর তো মাত্র ক’টা দিন, আগামী মাসের প্রথম দিনেই বলতাম। অফিস থেকে ফিরে এসে স্ত্রীর কাছ থেকে ঘটনাটি শোনার পর চোখে পানি এসে গিয়েছিলো। ছেলেকে ডেকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলাম, তোমার অব্বার অনেক টাকা নেই, একথা সত্য। তাই বলে মাসের মাঝামাঝি সময়ে তোমার জন্য একজোড়া জুতা কিনতে পারবো না, একথা সত্য নয়। ভবিষ্যতে এমন আর করবে না। জামাজুতা ছোট হয়ে গেলে অবশ্যই আম্মাকে বা আব্বাকে বলবে। সেদিনই তাকে নিয়ে বাজারে গিয়ে নতুন জুতা কিনে দেই। আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া। পাঠককে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে জনাচ্ছি, সেই ছেলে আল্লাহর মেহেরবানিতে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর শতকরা একশ’ ভাগ বৃত্তি সহকারে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেশাগত ডিগ্রি নিয়ে সতভাবে জীবন যাপন করছে। যারা ঘুষ খাচ্ছেন, ব্যবসা-বানিজ্যের নামে চুরি করছেন, মানুষকে বা সরকারকে ঠকিয়ে নানাভাবে পয়সা কামাচ্ছেন, অথবা যারা এসব করবেন বলে চিন্তাভাবনা করছেন, তাঁরা যদি বিষয়টা একবার ভেবে দেখেন। তাঁদের ছেলেময়েরা বড় হয়ে নিজেদের বাবা-মা সম্পর্কে কী ধারণা পোষণ করবে। নিজের সন্তানের কাছে কৃত কর্মের জন্য পাপী বা অপরাধী বলে বিবেচিত হবার চাইতে বাবা-মার জন্য অধিক দু’র্ভাগ্যজনক দুনিয়াতে আর কিছু আছে কি ? দশ বা বারো বছর বয়স হলেই ছেলেমেয়েরা বুঝতে পারে বাবা (এবং মা) হালাল রুজি কামাই করছেন, না হারাম রুজি কামাই করছেন। যদিও ভয় অথবা লজ্জায় তারা সেটা নিয়ে কথা বলে না। যদি কেউ মনে করেন, ওরা তো ছোট, ওরা কিছুই বোঝে না। তা’হলে তিনি অবশ্যই বোকার স্বর্গে বাস করছেন।