Ashraf’s Column

Tuesday, June 10, 2014

ক্যাডেট কলেজের টুকরো স্মৃতি: ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ: পর্ব ১১: কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা

(এক) আর্মিতে অনেক মজার মজার জোক বা চুটকি প্রচলিত আছে। জোকগুলেো সৃষ্টি হয়েছে মূলত: আর্মি জীবনের সুখদু:খের অভিজ্ঞতা থেকে। প্রায় প্রতিটি জোকেরই কিছু-না-কিছু শেখার বিষয় থাকে। এমন একটি বহুল প্রচলিত জোক: One can do a job in three ways. They are the right way, the wrong way, and the army way. The last one is neither right nor wrong but serves the purpose. যার সরল অর্থ করলে দাঁড়ায়, যেকোনো কাজ তিনভাবে করা যেতে পারে। শুদ্ধভাবে, ভুলভাবে এবং আর্মির মতো করে। শেষের প্রক্রিয়াটি শুদ্ধও নয়, ভুলও নয়, তবে কাজ চলে যায় ! সেবার তেমন একটি অভিজ্ঞতা হলো। সকল শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নিয়ে কলেজ চত্বরে অন্যান্য গাছের চারার সাথে অনেক কাঁঠাল গাছের চারা লাগিয়েছিলাম। ছোটোবেলা থেকে কাঁঠাল গাছের প্রতি আমার প্রচন্ড রকমের দূর্বলতা ছিলো, এখনও আছে। কাঁঠাল, কাঁচা অথবা পাকা, খাদ্য হিসেবে মানুষের জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর। এর ‘বুচরা’ দুগ্ধবতী গাভীর জন্য খুব পুষ্টিকর। ঘরবাড়ি, ফার্নিচার এমনকি কাঠের সিন্দুক বানাবার জন্য মজবুতি, আঁশ এবং টেক্সচারের দিক থেকে সেগুনের পরই এর স্থান। আর কাঁঠালের পাতা তো গরু এবং ছাগল, বিশেষ করে ছাগলের জন্য প্রবাদসম খাদ্য। ঝিনাইদহ অঞ্চলের মাটি ও জলবায়ু কাঁঠাল গাছের জন্য খুবই উপযোগী। কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রায় সবাই গরু-ছাগল পুষতেন। তাই সবাইকে ‘দরবারে’ কঠোরভাবে সতর্ক করে দিলাম যেনো কারও গরু-ছাগল দ্বারা কাঁঠালের চারার কোনো ক্ষতি না হয়। মালি ও চৌকিদারদের আদেশ দেওয়া হলো কড়া নজর রাখার জন্য। কয়েকদিন না যেতেই হেড মালি দৌড়ে এসে জানালো অমুক সিনিয়র শিক্ষকের ছাগলকে কাঁঠাল চারার পাতা ভক্ষণরতো অবস্থায় আটক করা হয়েছে। পরবর্তী আদেশ চাই। কলেজের দেয়ালের বাইরে স্থানীয় পৌরসভা পরিচালিত খোঁয়াড় আছে। ধৃত ছাগলটি সেখানে জমা দিলে কিছু নগদ টাকা জরিমানা দিয়ে মালিক সেটা ছাড়িয়ে আনতে পারবে। এতো কিছু বলার পরেও ছাগলের (মালিকের নয়) এমন বেয়াদবি সহ্য হলো না। মনেমনে ভবালাম, এখনই সুযোগ ! বিড়াল পহেলা রাতেই মারতে হবে ! এমন এক্সাম্পল সেট করতে হবে যাতে ক্যাম্পাসের সব গরু-ছাগলের মালিক হেদায়েত হয়ে যায়। হুকুম দিলাম, এখনই জবাই করে ছাগলের গোস্ত পুরোটা ক্যাডেট মেসে দিয়ে দাও। চামড়া বাজারে বিক্রি করে টাকাটা ক্যাডেট মেসের পেটি ক্যাশে জমা করে দাও। যেই কথা সেই কাজ। ছাগলের মালিক বিষয়টি জানার আগেই ছাগলটি গোস্ত হয়ে মেসের ফ্রিজে স্থান পেলো। ছাগলের মালিক যখন জানলেন তখন তিনি আর এ নিয়ে কোনো রা করলেন না। তবে ঘটনাটি ওয়াইল্ড ফায়ারের মতো মানুষের মুখেমুখে শুধু ক্যাম্পসে নয়, ঝিনাইদহ শহরে পৌছে গেলো। সপ্তাহ দু’য়েক পরে মেস ম্যানেজারকে ডেকে জব্দকৃত ছাগলের গোস্তের পরিমান এবং কনট্র্যাক্ট রেটে তার দাম, এবং চামড়ার বিক্রয় মূল্য জেনে নিয়ে পুরো টাকাটা ছাগলের মালিককে দিয়ে দিতে বললাম। টাকাটা পাবার পর ছাগলের মালিক ভদ্রলোক একদিন এসে অতি লজ্জিতভাবে আমার সাথে দেখা করে ক্ষমা চাইলেন। ততোদিনে আমার উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে গেছে। এর পর যতোদিন ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে ছিলাম, কারও গরু বা ছাগলে ক্যাম্পাসের কোনো ফুল বা ফল গাছের পাতা খেয়েছে, এমন খবর কানে আসেনি। (দুই) ১৯৮০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ের কথা। আমি তখন আর্মি হেডকোয়ার্টার্সে কাজ করি। একদিন দুপুর বেলা, তখনও অফিস ছুটি হতে কিছুটা সময় বাকি, আমার স্ত্রী বাসা থেকে টেলিফোন করে জানালেন, ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ থেকে একজন স্টাফ একটি বিশাল পাকা কাঁঠাল নিয়ে এসেছে। বলছে, প্রিনসইপিাল সাহেব পাঠিয়েছেন। এখন কী করবো ? এখানে উল্লেখ্য যে, আমার পুরো চাকুরি জীবনে নিজের ভাইবোন বা নিকট আত্মীয় ছাড়া অন্য কারও আমার বাসায় কোনো মিষ্টির প্যাকেট, ফলের ঝুড়ি বা অন্য কিছু নিয়ে আসা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিলো। না জেনে যদি কেউ এনে ফেলে তবে তা বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান করা হতো, আমি বাসায় থাকি বা না থাকি। বাংলাদেশের প্রক্ষিতে এর কারণ ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। আমার ছেলেমেয়েদের বিয়ের অনুষ্ঠানে বা জন্মদিনে আমি সতর্কতার সাথে সেসব লোকদের আমন্ত্রণ জানাতে বিরত থেকেছি যাদের সাথে আমার অফিসের দূরতম কোনো ব্যাবসায়িক সম্পর্ক ছিলো। কাঁঠাল বহনকারিকে বারান্দায় বসিয়ে রাখতে বলে আমি টেলিফোনে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের তৎকালীন প্রিন্সিপাল লে: কর্নেল নূরুন্নবীকে (পরে কর্নেল, বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত। ঢাকার মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের প্রতিষ্ঠাতা।) টেলিফোন করে বিষয়টি জানতে চাইলাম। প্রিন্সিপাল আমারই কোরের অতি ঘনিষ্ট জুনিয়র কলিগ ছিলো। টেলিফোনে প্রথমেই তাকে প্রচন্ড কিছু বকা (ঝাড়ি) দিলাম। বললাম, তুমি তো ভালো করে জানো আমি আমার বাসায় কারো এসব আমকাঁঠাল আনা একেবারে অনুমেোদন করি না। তারপরও সব জেনেশুনে কেনো আমার বাসায় কাঁঠাল পাঠিয়েছো ? পাঠাবার আগে কেনো আমার অনুমতি নেওনি ? আমার পক্ষ থেকে বকাঝকা শেষ হলে নবী বললো, স্যার, আপনার সব কথা মেনে নিলাম। এবার দয়া করে আমার কথা একটু শুনুন। আপনি প্রিন্সিপাল থাকার সময় যে কাঁঠালের চারা লাগিয়ে গিয়েছিলেন সেগুলোতে এবার প্রথম ফল ধরেছে। কলেজের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারিদেরকে তাদের পরিশ্রমের স্বীকৃতি হিসেবে প্রথম ফলনের সব কাঁঠাল নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতে বললাম। তারা সবাই এক বাক্যে বললো, এসব কাঁঠাল গাছ প্রাক্তন প্রিন্সিপাল আশরাফ স্যার নিজ উদ্যোগে আমাদের উৎসাহ ও প্রেরণা দিয়ে লাগিয়েছিলেন। এর মধ্যে আনেক গাছ তিনি নিজ হাতে লাগিয়েছিলেন। এসব গাছের কাঁঠাল তাঁকে না দিয়ে আমারা খেতে পারবো না। উনি এখন ঢাকায় আছেন। ওনার জন্য অন্তত: একটি কাঁঠাল হলেও পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। নবী আরও বললো, এটা কর্মচারিদের আন্তরিক আনুরোধ ছিলো, যা ফেলে দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিলো না। আপনার প্রাক্তন কর্মচারিদের আপনার প্রতি সম্মান ও ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে কাঁঠালটি আপনাকে পাঠিয়েছে। এতে আমার কোনো ভূমিকা নেই। এখন রাখা না রাখা আপনার ইচ্ছে। রাখতে না চাইলে বহনকারির হাতে ফেরত পাঠিয়ে দিন। আমি কর্মচারিদের সেভাবে বলে দেবো। আর পূর্বানুমতির কথা যদি বলেন, তাহলে বলবো, কাজটি আমি জেনেশুনে করেছি। অনুমতি চাইলে আপনি কখনও তা দিতেন না। এরপর আমার পক্ষে কাঁঠালটি ফিরিয়ে দেওয়া আর সম্ভব হলো না। ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের কর্মচারিদের প্রতি কৃতজ্ঞতায় আমার মন ভরে গেলো। নবীকে বললাম, কাঁঠাল রেখে দিলাম। ওদেরকে আমার কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে দিও। আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া করতে বলো। অফিস থেকে বাসায় এসে কাঁঠাল বহনকারিকে নিয়ে একসাথে লাঞ্চ করে একই কথা বলে তাকে বিদায় জানালাম। জীবনে অনেক কাঁঠাল খেয়েছি। কন্তু সেদিনের মতো তৃপ্তি নিয়ে কোনো কাঁঠাল খেয়েছি বলে মনে পড়ে না। (তিন) তখনকার ক্যাডেট কলেজের ক্যাডেটদের জন্য নির্ধারিত দন্ডবিধিতে অপরাধকে দুই শ্রেণীতে ভাগ করা ছিলো। এক, মেজর অফেন্স অর্থাৎ বড় অপরাধ। দুই, মাইনর অফেন্স অর্থাৎ ছোটো অপরাধ। কোনো ক্যাডেট বড় কোনো অপরাধ করলে তাকে কলেজ থেকে অবশ্যই ‘উইথড্র’ বা বহিস্কার করার হুকুম ছিলো। ধূমপান বড় অপরাধ বলে গণ্য হতো। একাদশ শ্রেণীর একটি ছেলে ধূমপান করে ধরা পড়লো। দন্ডবিধি অনুযায়ী তাকে কলেজ থেকে ‘উইথড্র’ করার আদেশ দিলাম। ছেলেটির বাবা নিকটস্থ কোনো এক জেলা বারের এডভোকেট ছিলেন। তিনি এসে ভাইস প্রিন্সিপাল মি: রবকে এসে ধরলেন। যখন দেখলেন কোনো যুক্তিতে কাজ হচ্ছে না তখন তিনি এক মজার যুক্তি দেখালেন। বললেন, আজকাল পৃথিবীর সবাই সিগারেট খায়। আমার ছেলে না হয় একটু খেয়েছে। তাতে এমন কী হয়েছে ? তাই বলে আপনারা তাকে কলেজ থেকে বের করে দেবেন ! এটা অন্যায়। মি: রব জবাবে যা বলেছিলেন তা আজও আমার মনে আছে। তিনি বলেছিলেন, পৃথিবীর সবাই বিয়ে করে। যান, আপনার ছেলেকেও এখনই বিয়ে দিয়ে দিন ! (৪) বেয়াদবি করার জন্য হাউস মাস্টার একটি ছেলেকে বকা দিলেন। ছেলেটি ক্ষেপে গিয়ে হাউস মাস্টারকে খুব অভদ্র ভাষায় পাল্টা গালি দিলো। ছেলেটির আপন চাচা আর্মির সিনিয়র অফিসার ছিলেন। সে ভেবেছিলো তাকে কোনো কঠোর সাজা দেওয়া যাবে না। ছেলেটিকে পত্রপাঠ ‘উইথড্র’ বা বহিস্কার করে বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম। ছেলেটির চাচা, যিনি আমার সিনিয়র এবং পরিচিত ছিলেন, আমাকে টেলিফোনে বহুবার অনুরোধ করলেন ‘উইথড্রয়াল’ বাতিল করার জন্য। তাঁকে আমি বুঝালাম, ক্যাডেট কলেজ বিধি অনুযায়ী একবার কোনো ক্যাডেটকে কলেজ থেকে বহিস্কার করা হলে তাকে ফিরিয়ে আনার কোনো বিধান নেই। ছেলেটির বাবা যিনি যশোর জেলা বারের উকিল ছিলেন জেলা জজের আদালতে আমার বিরুদ্ধে মামলা করে দিলেন। প্রথমে আমি মামলার খবর জানতাম না। একদিন অন্য আর একজন যশোরের গার্ডিয়ান, যিনি নিজে উকিল ছিলেন, আমার অফিসে এসে মামলার খবর জানিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলেন। সব শোনার পর তিনি খুব দু:খ প্রকাশ করে মামালার জন্য কোনো চিন্তা না করতে বললেন। মামলার দিন আমার আদালতে হাজির হবার প্রয়োজন নেই। আমার পক্ষ নিয়ে তিনি বিনা পারিশ্রমিকে মামলায় লড়বেন বলে আশ্বস্ত করলেন। পরে শুনেছিলাম জজ সাহেব মামালা কোনো শুনানি না করে এই বলে খারিজ করে দেন যে, কোনো শিক্ষক যদি তাঁর ছাত্রকে বেয়াদবির জন্য শাস্তি দিয়ে থাকেন তাহলে যথার্থ কাজটিই করেছেন। এজন্য শিক্ষকদেরকে যদি আমরা বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে শুরু করি তাহলে দেশটি শিক্ষিত বয়াদবে ভরে যাবে। সমাজে শিক্ষিত ভদ্রলোক আর পাওয়া যাবে না। (৫) দুর্ঘটনায় স্থানীয় সরকার পক্ষীয় এম পি সাহেবের ভাগ্নে আহত হয়েছে। তাকে যশোর সদর হাপাতালে নিয়ে যেতে হবে। ভাইস প্রিন্সিপাল মি: রব তাঁর পরিচিত হওয়ায় এম পি সাহেব টেলিফোন করে কলেজের এম্বুলেন্স দ্রুত পাঠাতে বললেন। মি: রব জানালেন, কলেজের এম্বুলেন্স শুধুমাত্র অসুস্থ ক্যাডেটদের পরিবহনের জন্য। বিধি অনুযায়ী অন্যদের প্রয়োজনে এটা ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। তারপরও এম পি সাহেব আমাকে টেলিফোন করলেন। আমিও একই জবাব দিলাম। এম পি সাহেব ভীষণ ক্ষেপে গিয়ে আমাকে অভদ্র ভাষায় গালি দিয়ে বললেন, আমাকে তিনি দেখে নিবেন। মহামান্য প্রেসিডেন্টের কাছে আমার বিরুদ্ধে নালিশ করবেন। আমি তাঁকে ঠান্ডা মাথায় স্মরণ করিয়ে দিলাম, মহামান্য প্রসিডেন্ট আমাকে কাকুল মিলিটারি একাডেমি থেকে চিনেন। উনিই আমাকে প্রিন্সিপাল হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। আমাদের দুর্ভাগ্য শুধুমাত্র রাজনীতি করার জন্য তাঁর মতো একজন ভালো মানুষকে আপনার মতো একজন বাজে লোকের সাথে রাজনৈতিক সম্পর্ক রাখতে হচ্ছে। যাহোক, বিষয়টির এখানে সমাপ্তি ঘটে। মহামান্য প্রেসিডেন্টের অফিস থেকে কেউ কোনো দিন এ নিয়ে আমাকে কোনো প্রশ্ন করেনি। (৬) আমার বড় মামার ছোটো ছেলে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হবার জন্য লিখিত পরীক্ষা দিলো। তখনকার রেওয়াজ অনুযায়ী ৫০ জন প্রার্থীকে চূড়ান্তভাবে সিলেক্ট করার জন্য লিখিত পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে কমবেশি ১৫০ জন প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষা এবং মেডিক্যাল টেস্টের জন্য ডাকা হতো। দেখা গেলো আমার মামাতো ভাইটি মাত্র তিন নম্বর কম হবার কারণে মৌখিক পরীক্ষার জন্য কোয়ালিফাই করছে না। এখানে বলা যেতে পারে, তখনকার দিনে আমাদের কোনো কম্প্যুটার ছিলো না। দাদার আমলের টাইপরাইটার ছিলো সকল দাপ্তরিক কাজের জন্য একমাত্র ভরষা। ভর্তি পরীক্ষার টেবুলেশন করা, মেধা তালিকা প্রস্তুত করা, ইত্যাদি সকল কাজ নিরাপত্তা বজায় রেখে নিজ দায়িত্বে প্রিন্সিপালকে করতে হতো। সাধারণত: এ কাজে কেরানিদের সম্পৃক্ত করা হতো না। প্রিন্সিপাল নিজে অতি বিশ্বস্ত এক-দুজন শিক্ষককে সাথে নিয়ে কাজটি করতেন। সেবার আমার মামাতো ভাই ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলো, এ কথা আমি ছাড়া আর কারও জানা ছিলো না। আমি ইচ্ছে করলে লিখিত পরীক্ষার মেধা তালিকায় তিন নম্বর নিচে নেমে আমার ভাইকে মৌখিখ পরীক্ষার জন্য ডাকতে পারতাম। সেটা করলে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ১৫০ জনের বদলে ১৫৭/১৫৮ জন কোয়ালিফাই করতো। কখনও কখনও, বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীকে (যেমন ভালো খেলোয়াড়, অভিনেতা ইত্যাদি) সুযোগ দেওয়ার জন্য, এমন করা যে হতো না, তা নয়। প্রক্রিয়াগত দিক থেকে কাজটা করা তেমন অনিয়ম বা অন্যায় হতো না। কারও চোখেও পড়তো না। পরে মৌখিক পরীক্ষায় অনেক বেশি নম্বর প্রদান করে ভাইকে চূড়ান্তভাবে সিলেক্ট করা যেতো। কিন্তু আমার বিবেক সায় দিলো না। সবাইকে না হয় ফাঁকি দিলাম, আল্লাহকে তো ফাঁকি দেওয়া যাবে না ! যাহোক, কাজটি করিনি। এ নিয়ে কারও সাথে কথাও বলিনি। আমার কোনো অনুশোচনাও ছিলো না। রেজাল্ট বের হবার পর বড় মামা যখন দেখলেন তাঁর ছেলে পাশ করেনি, তখন তিনি মনে খুব আঘাত পেয়েছিলনে। গ্রামের লোকেরা ইতোমধ্যে মামাকে কংগ্রাচ্যুলেট করতে শুরু করেছিলো। আপন ভাগ্নে ক্যাডেট কলেজের প্রিন্সিপাল। তাঁর ছেলেকে আটকায় কে ? এ ঘটনার পর মামা আমার উপর অভিমান করে প্রায় এক বছর আমার বাসায় আসেননি। পরবর্তী কালে আমার সেই মামাতো ভাইটি ঢাকা কলেজ থেকে অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে এইচ এস সি পাশ করে আর্মিতে কমিশন লাভ করে। বর্তমানে সে একজন কর্মরত সিনিয়র অফিসার।

0 Comments:

Post a Comment

Subscribe to Post Comments [Atom]



<< Home