ক্যাডেট কলেজের টুকরো স্মৃতি: ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ পর্ব : ৮
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হত্যাকান্ড
১৯৮১ সালের ৩০ মে। ফজরের নামাজ শেষ করে উঠতে না উঠতেই ক্যান্টমেন্ট থেকে টেলিফোন কল পেলাম। অপর প্রান্ত থেকে পরিচিত একজন অফিসার উত্তেজিত কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলেন, স্যার, খবর শুনেছেন ? আমি বললাম, কী খবর ? তিনি বললেন, জেনারেল জিয়া হ্যাজ বিন কিল্ড। আমাকে চট্টগ্রাম রেডিওর খবর শোনার পরামর্শ দিয়ে তিনি ঝটপট টেলিফোন রেখে দিলেন। আমি জানতাম, প্রেসিডেন্ট জে: জিয়া তখন চট্টগ্রাম সফর করছিলেন। কিন্তু এমন মর্মান্তিক দু:সংবাদ শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। যেমন ছিলো না বাংলাদেশের কোটিকোটি মানুষ। দ্রুত রেডিও অন করলাম। জে: জিয়ার নিহত হবার সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে। আমাদের গেস্টরুমে তখন বরিশাল থেকে বেড়াতে আসা আমার মেঝো ভায়রা জনাব সিরাজুল ইসলাম ছিলেন। পেশাগতভাবে একজন সফল ব্যবসায়ী হলেও ব্যাক্তি জীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত পরহেজগার, সুফীবাদের অনুসারী। গেস্টরুমে উঁকি দিয়ে দেখলাম দুলাভাই তখনও তাঁর নিয়মিত রুটিন আনুযায়ী ফজরের নামাজের পর অজিফা পড়ছেন। আমার পায়ের আওয়াজ পেয়ে তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, কী হয়েছে ? তিনি খবর শুনে “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন” পড়ে মন্তব্য করলেন, আফসোস করে লাভ নেই। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য করেন। আমরা বান্দারা সব সময় বুঝতে পারিনা। আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম, দুলাভাই, এটা কেমন কথা হলো ? এতোবড় একজন দেশপ্রেমিক নেতাকে হত্যা করা হলো। আর আপনি বলছেন, আল্লাহ ভালো করেছেন। নাস্তার পর এ নিয়ে আপনার সাথে কথা বলবো, বলে তিনি আবার অজিফায় ফিরে গেলেন।
কিছুদিনি আগে একজন গুণী লোকের মুখে শুনেছিলাম, বহি:স্থ কোনো একটি শক্তি চায়না বাংলাদেশের নেতৃত্ব কখনও একজন শক্তিশালী জাতীয়বাদী নেতার হাতে পড়ুক। তাতে বহি:স্থ শক্তিটি বাংলদেশের অর্থনীতি, ডিফেন্স, ফরেন পলিসি ইচ্ছেমতো নিজ স্বার্থে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। পরবর্তীকালে মি: অশোক রায়না নামের একজন ভারতীয় লেখকের লেখা ‘ ইনসাইড র দি স্টোরি অব ইন্ডিয়া’স সিক্রেট সার্ভিস ’ নামক বইটি পড়ে একথার প্রমাণ পেয়েছিলাম। বঙ্গুবন্ধু হত্যা এবং পরে জে: জিয়া হত্যা, অনেকে মনে করেন, অভিন্ন সূত্রে গাঁথা। আমাদের জাতির জীবনে যাত্রালগ্নে এদু’টি নির্মম হত্যাকান্ড আমাদের জাতীয় অগ্রগতিকে যে কতোটা পিছিয়ে দিয়েছে তা আজ সকল সচেতন দেশবাসী উপলব্ধি করছেন।
জে: জিয়া পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি, কাকুলে আমার প্রশিক্ষক ছিলেন। তিনি আমাকে ব্যাক্তিগতভাবে শুধু চিনতেনই না, আমাকে তিনি অত্যন্ত স্নেহ করতেন, বিশ্বাস করতেন। তাঁর মতো একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, একজন মহান দেশপ্রেমিক, একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মবীর এবং, সর্বোপরি, একজন রাষ্ট্রনায়ককে কেনো ঘাতকদের গুলিতে প্রাণ দিতে হবে, কোনোমতেই সে প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পরবর্তীকালে তাঁকে হত্যা করার অপরাধে ১৩ জন কর্মরত আর্মি অফিসারকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। অনেককে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদন্ড দেওয়া হয়। বেশ কিছু অফিসার চাকুরিচ্যুত হয়। কিন্তু আফসোস, যেসব দেশি ও বিদেশি শক্তি এই নির্মম হত্যাকান্ডের পেছনে ছিলো তাদেরকে চিহ্নিত করার জন্য কোনো তদন্ত আমার জানামতে আজও করা হয়নি। যেমনটি করা হয়নি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবর রহমানের হত্যাকান্ডের পর। অথচ, উভয় পক্ষের কিছু লোক পরষ্পরের দিকে অভিযোগ ছুড়ে দিয়ে কূটতর্কে ব্যস্ত আছে। জনগণের দৃষ্টি অন্য দিকে ডাইভার্ট করে আসছে। আল্লাহ জানেন, অযোগ্য, অদক্ষ এবং বহুলাংশে অসৎ এসব লোকেরা আর কতোদিন এদু’জন মহান নেতার লাশকে মূলধন করে রাজনীতি করে যাবে।
সে যাহোক, ওসব অপ্রিয় রাজনৈতিক প্রসঙ্গ আমার আজকের বলার বিষয় নয়। জে: জিয়ার হত্যার খবর শোনার পর ভাবতে লাগলাম, আমার কলেজে এ ঘটনার কী প্রভাব পড়বে এবং আমার কী করণীয় হবে। তাড়াতাড়ি নাস্তা সেরে ইউনিফর্ম পড়ে অফিসের উদ্দেশ্যে ঘরের বাইরে আসতেই কলেজের হেড চৌকিদার, একজন অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক, সামনে এসে দাঁড়ালো। রিপোর্ট করলো, স্যার, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট থেকে জে: মঞ্জুরের এক ব্রিগেড সৈন্য শুভপুর যাবার পথে আমাদের কলেজের গেইটের সামনে যাত্রাবিরতি করছে। তাদের লোক কলেজের ভিতরে এসে খাবার পানি নিতে চাচ্ছে। আমি তাদের গেইটের সামনে বসিয়ে এই বলে এসেছি যে, প্রিন্সিপাল স্যারের অনুমতি নিয়ে আসছি। স্যার দেরি করা যাবে না। তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত দিন। নইলে ওরা গেইট ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে পড়বে। ক্যাডেটরা ওদের দেখলে ভয়ে চিৎকার, দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দেবে। কী করবো, বা কার সাথে পরামর্শ করবো, তা চিন্তা করারও সময় নেই। মনেমনে আল্লাহকে স্মরণ করতে লাগলাম। ওদের ব্রিগেড কমান্ডার (পরে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত) ব্যাক্তিগতভাবে আমার পরিচিত ছিলেন। হেড চৌকিদারকে বললাম, তুমি নিজে গিয়ে ওনার সাথে দেখা করে আমার সালাম দিয়ে বলো, ওনার সৈন্যরা যদি কলেজের ভিতর ঢুকে পড়ে, তাহলে এক ভীষণ অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। ক্যাডেটরা ভয় পেয়ে যত্রতত্র ছোটাছুটি শুরু করবে। কেউ কারও কথা শুনবে না। কলেজের কোনো সীমানা প্রাচীর নেই। অনেক ক্যাডেট প্রাণভয়ে পালিয়ে যেতে পারে। পরে যখন শান্তি অবস্থা ফিরে আসবে, তখন দেখা যাবে কোনো ক্যাডেটকে হয়তো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সেই ছেলেটি হয়তো আপনাদের কারও ছেলে বা আত্মীয় হতে পারে। আর যা-ই করেন, এই বাচ্চাদেরকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের সবার কর্তব্য। আমাদের কলেজের পিকআপে করে ভিতর থেকে গেইট পর্যন্ত আমরা পানি এনে দেবো। সেখান থেকে আপনার সৈন্যরা পানি নিয়ে যাবে। তাছাড়া, পুকুরের চারপাশে যতো নারিকেল গাছ আছে তা থেকে আপনার লোকেরা যতো খুশি ডাব পেড়ে খেয়ে তৃষ্ণা নিবারণ করতে পারে। আল্লাহর অশেষ দয়া, কথায় কাজ হলো। সৈন্যরা কলেজের ভেতরে আর প্রবেশ করলো না।
ইতোমধ্যে ঢাকা রেডিও থেকে প্রচার হচ্ছিলো যে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে ব্রিগেডিয়ার ( পরে মেজর জেনারেল, বর্তমানে মরহুম) মাহমুদুল হাসান (অনেকে আদর করে কালাভাই নামে ডাকতো) সরকারের অনুগত সৈন্যবাহিনী নিয়ে বিদ্রোহ দমনের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম অভিমুখে রওয়ানা হয়ে গেছেন। কলেজের বেশ কিছু শিক্ষক অত্যন্ত আতংকিত হয়ে আমার আফিসে এসে জড়ো হলেন। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ছিলেন যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের সময় সাগর থেকে ফৌজদারহাটের উপর পাকিস্তানি নৌবাহিনীর গোলা বর্ষণ প্রত্যক্ষ করেছিলেন। সেই বিভৎষতার কথা মনে করে তাঁরা সম্ভাব্য যুদ্ধ শুরু হবার আগেই কলেজ ক্যাম্পাস ত্যাগ করে চলে যেতে চাইলেন। এঁদের মধ্যে অন্তত: একজন চট্টগ্রাম শহরে তাঁর আত্মীয়ের বাসায সপরিবারে আমাকে আশ্রয় দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন। আর আমি যদি একান্তই কলেজ ত্যাগ না করি তাহলে আমার স্ত্রী ও সন্তানদের সময় থাকতে শহরে পাঠিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করলেন। আমার ও আমার পরিবারের প্রতি তাঁদের কনসার্নকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে আমি সপরিবারে কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলাম। আমার বিশ্বাস ছিলো, যদি একান্তই উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগোলি শুরু হয়, কোনো পক্ষই আমার ক্যাডেটদের ক্ষতি হয় এমন কিছু করবে না। উভয় পক্ষের লোকদের ছেলে বা আত্মীয়ের ছেলে, কেউ না কেউ কলেজে আছে। কথাটা তারা মনে রাখবে। পরে শুনেছিলাম, কলেজের অনেক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারি তাঁদের পরিবারবর্গ ক্যাম্পাসের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।
সকাল প্রায় দশটার দিকে বিদ্রোহের অন্যতম রিংলিডার হিসেবে পরিচিত একজন (পরে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত) আমাকে টেলিফোন করলেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। দু’বছরের সিনিয়রিটি পেয়েও তিনি চাকুরিতে আমার জুনিয়র ছিলেন। যাহোক, টেলিফোন হাতে নিয়েই তিনি আমাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি শুরু করলেন। আমার অপরাধ, কেনো আমি কলেজে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেছি। কেনো কলেজে ক্লাস বন্ধ রেখেছি। আমি যতটা সম্ভব শান্ত থেকে তাঁকে বুঝাতে চেষ্টা করলাম, দেশের মহামান্য প্রেসিডেন্ট, যেভাবেই হোক, মারা গেছেন। সেজন্য তাঁর বিদেহী আত্মার প্রতি সম্মান দেখিয়ে পতাকা অর্ধনমিত করেছি। কলেজের স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ রেখেছি। জোহরের নামাজের পর কলেজ মসজিদে বিশেষ দোয়ার ব্যবস্থা করেছি। এসব শুনে তিনি উন্মাদের মতো চিৎকার করে বললেন, বাস্টার্ড, কার অর্ডারে তুমি এগুলো করছো ? আমি বললাম, এসব করার জন্য কারও অর্ডারের প্রয়োজন হয়না। কোনো দেশের প্রেসিডেন্ট মারা গেলে রাস্ট্রীয় প্রটোকলের অংশ হিসেবে এসব করা হয়ে থাকে, তা প্রেসিডেন্ট যেভাবেই মারা যান না কেনো। জবাবে বললেন, কাম অন বাস্টার্ড, আমি এখনই লোক পাঠাচ্ছি। তোমাকে প্রটোকল শিখিয়ে দেবে। আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল রইলাম। আল্লাহ মালিক। যা কপালে আছে তাই হবে। তখন মনে পড়লো মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের তৎকালীন প্রিন্সিপাল লে: কনর্ল এম এম রহমান এ ই সি’র কথা। আমি আমার সন্তানসম ক্যাডেটদের সামনে নিজেকে ছোটো করতে চাইনি। যাহোক, শেষতক হুমকি প্রদানকারীর লোকেরা আর আসার সুযোগ পায়নি। অথবা, পাঠাবার মতো লোক হাতের কাছে পাননি।
রাত্রি প্রায় দেড়টার দিকে চৌকিদারের ডাকাডাকি শুনতে পেলাম। সেই সাথে অতি পরিচিত কন্ঠের আওয়াজ। আশরাফ, দরজা খোলো। ভয় পেয়ো না। আমি ব্রিগেডিয়ার মাহমুদুল হাসান। কুমিল্লা থেকে এসেছি। বেশিক্ষণ বসবো না। এক কাপ চা খেয়ে চলে যাবো। দরজা খুলে ব্রি: মাহমুদকে দেখামাত্র তিনি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। তাঁর সাথে ব্রিগেড আর্টিলারির সিও লে: কর্নল সামস। তাঁর সাথেও বুক মেলালাম। অতো রাত্রে বাবুর্চি বাসায় থাকার কথা নয়। আমার স্ত্রী নিজ হাতে চা-নাস্তা বানিয়ে পরিবেশন করলেন। ব্রি: মাহমুদ কেমন করে নিজ সৈন্য নিয়ে বিনা বাধায় ভাটিয়ারি পর্যন্ত এসেছেন, সেকথা শুনালেন। বিদ্রোহী ইউনিটগুলোর অফিসার ও সৈন্যরা কেমন করে একের পর এক সাদা ফ্ল্যাগ দেখিয়ে আত্মসমর্পণ করলো সে বিবরণ শুনালেন। ব্রি: মাহমুদের বিবরণ থেকে একটা বিষয় অত্যন্ত পরিষ্কার হয়ে হয়ে গেলো যে, গুটিকয়েক অফিসার এই বিদ্রোহ ও প্রসিডেন্টের হত্যাকান্ডে জড়িত। সাধারণ সৈনিকরা এ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত ছিলো না।
পুরো দেশবাসীর সাথ আমার ক্যাডেটরাও এই মর্মন্তুদ ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেলো। শিক্ষক ও স্টাফ কেউ মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারছিলেন না। প্রতিদিন ক্যাডেট ও শিক্ষকদের এসেম্বলি করে তাদের মটিভেট করলাম। যাতে গুজবে কান দিয়ে বিভ্রান্ত না হয় সেজন্য শিক্ষকদের মাধ্যমে সঠিক সংবাদ প্রবাহ জারি রাখার ব্যবস্থা করলাম। ধীরেধীরে আবস্থা শান্ত হয়ে এলো। কলেজে স্বাভাবিক কর্মজীবন ফিরে এলো।
৩০ মে তারিখ সকালে নাস্তার টেবিলে সিরাজ দুলাভাই এভাবে তাঁর মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেন। আল্লাহ স্বয়ং ইমানদার এবং মানী লোকের মান রক্ষা করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি একটি ঘটনা উল্লেখ করলেন। কোনো একজন ওলিআল্লাহ (নামটা তিনি বলেছিলেন, আমি ভুলে গেছি) মসজিদে খুৎবা দেওয়ার সময় ইসলামে বিধবা বিবাহের প্রয়োজনীয়তা, গুরুত্ব এবং উপকারিতা সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, সে বিষয়ে উল্লেখ করলেন। খুৎবা শেষ হলে এক ত্যাদড় মার্কা তরুণ হুজুরকে প্রশ্ন করে বসলো, হুজুর ইসলামে বিধবা বিবাহ যদি এতই ভালো হয় তাহলে আমি আপনার মাকে, যিনি একজন বিধবা, বিয়ে করতে চাই। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য জানতে চাই। কয়েক মুহূর্তের বিব্রত অবস্থা কাটিয়ে উঠে হুজুর হাসিমুখে জবাব দিলনে, বিয়ে ব্যাপারটা ইসলামে দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক নরনারীর চুক্তির বিষয়। প্রস্তাবিত বিয়েতে তুমি এক পক্ষ। তুমি রাজি আছো। অপর পক্ষে আমার মা। চলো আমার বাড়ি যেয়ে মাকে জিজ্ঞাসা করি। তিনি যদি এ বিয়েতে রাজি থাকেন, তাহলে, আলহামদুলিল্লাহ, এ বিয়ে হবে। এই বলে হুজুর মসজিদ থেকে বের হয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা হলেন। পেছনে অন্য মুসুল্লিরা, সাথে সেই তরুণটি। কিছুটা রাস্তা আসার পর তরুণটি হঠাৎ বুকে হাত দিয়ে বসে পড়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো। হুজুর স্বগতোক্তি করলেন, হে আল্লাহ কেনো এমনটি করলে ? আমি তো ওকে কোনো অভিশাপ দেইনি। অন্যরা ঘটনার নাটকীয়তায় অবাক হলেও সবাই বুঝতে পারলো, আল্লাহ তাঁর এক প্রিয় বান্দাকে আসন্ন অপমান থেকে বাঁচাবার জন্য এমন অলৌকিক ঘটনা ঘটালেন। সিরাজ দুলাভাই সবশেষে নিজের মতো করে এভাবে বললেন, জে: জিয়া একজন নেক বান্দা ছিলেন। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেভাবে আগাচ্ছে তাতে জে: জিয়া রাজনীতির উপর নিয়ন্ত্রণ দ্রুত হারাচ্ছেন। মনে হয়, আল্লাহ ওনাকে কোনো আসন্ন অপমান বা ব্যর্থতা থেকে বাঁচাবার জন্য এমন করে থাকবেন। এই অকাল মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আল্লাহ ওনাকে আরও সম্মান ও মর্যাদা দান করবেন।
আধ্যাত্মিক জগতের উচ্চমার্গের এসব কথা আমার মতো সাধারণ লোকের মাথায় ঢোকার কথা নয়। তবে জে: জিয়ার জানাজায় আগত লোকসংখ্যা আমার সেদিনের মেহমানের কথার সত্যতা প্রমাণ করে। জে: জিয়ার সাথে আমার ব্যাক্তিগত সম্পর্ক সম্বন্ধে আগেই বলেছি। আমার পক্ষে নির্মোহ অবস্থান উঠে তাঁকে মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। যেমন কোনো পুত্র নির্মোহ অবস্থান থেকে নিজ পিতার সমালোচনা করতে পারে না। আশা করি পাঠক আমার এ ব্যর্থতাকে ক্ষমা করবেন।
0 Comments:
Post a Comment
Subscribe to Post Comments [Atom]
<< Home