ক্যাডেট কলেজের টুকরো স্মৃতি: ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ: পর্ব ১: প্রিন্সিপাল পদে যোগদান
১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ৮ তারিখে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের প্রিন্সিপাল পদে যোগদান করি। তখন আমার বয়স কতোই বা হবে। সার্টিফিকেট অনুযায়ী বত্রিশ বছর কয়েক মাস। বাস্তবে তেত্রিশ বছর। প্রসঙ্গত: বর্তমান প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের জন্য একটা কথা বলা প্রয়োজন মনে করছি। এখন থেকে ষাট-সত্তর বছর আগে, আমাদের ছোটোবেলায়, এখনকার মতো জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের কোনো রেওয়াজ এবং ব্যবস্থা ছিলো না। প্রায় সকলের দু’টো করে জন্মদিন থাকতো। একটা ছিলো আসল জন্মদিন। আর একটা অফিসিয়াল জন্মদিন। ক্লাস নাইনে উঠার পর সকলকে দু’বছর পর মেট্রিকুলেশন পরীক্ষার জন্য শিক্ষা বোর্ডে নাম রেজিস্ট্রি করতে হতো। কাজটি নিজনিজ স্কুলের মাধ্যমে করতে হতো। তখন, মাস্টার্স পাশ করে সরকারি চাকুরিতে ঢোকার সর্বনিম্ন বয়স বিবেচনায় রেখে, স্কুলের হেড স্যার একটা জন্মদিন ঠিক করে লিখে দিতেন। যাতে রিটায়ার করার আগ পর্যন্ত সর্বোচ্চ বেশিদিন চাকুরি করা সম্ভব হয়। আমার বেলায়ও তেমনটি হয়েছিলো। এ নিয়ে একবার জেদ্দা এয়ারপোর্টে বেশ বিব্রত হয়েছিলাম। আমার পাসপোর্ট দেখতেদেখতে ইমিগ্রেশন অফিসার হঠাৎ আমাকে প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা বলোতো তোমার দেশের প্রায় সব লোকের জন্মদিন পহেলা জানুয়ারি হয় কেনো ? সৌদি ইমিগ্রেশন অফিরারটি হঠাৎ আমাকে কেনো এমন প্রশ্ন করলেন তা বুঝতে পারলাম না। আমার পাসপোর্টে অবশ্য আমার সরকারি জন্মদিন পহেলা জানুয়ারি ছিলো না। উপরে বর্ণিত আমার জবাব শুনে ভদ্রলোক অবাকই হয়েছিলেন বৈ কি ! যাহোক, আগের কথায় আসি। বলা হয়েছিলো এতো কম বয়সে, অর্থাৎ চল্লিশের চাইতে কম বয়সে,উপমহাদেশে আমার আগে আর কেউ পাবলিক স্কুল বা ক্যাডেট কলেজে প্রিন্সিপাল পদে নিয়োগ পাননি। আজকে ছত্রিশ বছর পর, ২০১৪ সালে, যখন ফিরে তাকাই তখন মনে হয়, আমার মতো এতো অল্প বয়সের একজনকে এমন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেবার পেছনে দু’টি কারণ ছিলো। এক, ১৯৭১ সনের পূর্বে সশস্ত্রবাহিনীর শিক্ষা বিভাগ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানি অফিসাররা চাকুরিতে সিনিয়র হবার কারণে প্রিন্সিপাল পদে নিয়োগ পেতেন। তখন পর্যন্ত মাত্র একজন বাংগালি অফিসার এই পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন। তাঁর নাম শহীদ লে: কর্নেল এম এম (মোহাম্মদ মঞ্জুরুর) রহমান এইসি (আর্মি এডুকেশন কোর), যিনি কর্নেল রহমান নামে অধিক পরিচিত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজ কর্মস্থল ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে কনের্ল রহমান পাকিস্তান আর্মির হাতে নিমর্মভাবে, একজন সত্যিকারের বীরের মত, শহীদ হন। দু:খের বিষয়, আমাদের আর্মি তথা দেশ আজ পর্যন্ত এই বীরের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখাতে পারেনি।
দুই, তখন দেশের প্রসিডেন্ট হিসেবে চীফ এক্সিকিউটিভ ছিলেন শহীদ জেনারেল জিয়াউর রহমান, বীর উত্তম। ডিফেন্স মিনিস্ট্রির দায়িত্বও তাঁর হাতে ছিলো। জে: জিয়া পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে সরাসরি ইন্সট্রাক্টর হিসেবে আমাকে পড়িয়েছেন, ট্রেইনিং দিয়েছেন। ১৯৭৩ সালে আর্মি হেডকোর্য়াটার্সে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি (বি এম এ) প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে, প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য, একটি সেল গঠন করা হয়েছিলো। অনেক কাজের মধ্যে যার প্রধান কাজ ছিলো বি এম এ’র জন্য টেবল অব অর্গানাইজেশন এন্ড ইকুইপমেন্ট (টি ও এন্ড ই) প্রনয়ণ করা। এই সেলে প্রথম যে চারজন অফিসারের কাজ করার গৌরব হয়েছিলো তার মধ্যে আমি একজন ছিলাম। জে: জিয়া আর্মির ডেপুটি চীফ অব স্টাফ হিসেবে সেলের কাজ তত্বাবধান করতেন। তখন আর একবার আমার সুযোগ হয়েছিলো জে: জিয়ার প্রত্যক্ষ সাহচর্যে আসার। পরে আরও একবার জে: জিয়ার ব্যক্তিগত তত্বাবধানে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিলো। ১৯৭৫ সালে মার্শাল ল’ জারি হবার পর রাস্ট্রের সকল গোয়েন্দা সংস্থার কাজকর্ম কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় করার জন্য কোঅর্ডিনেশন এন্ড কন্ট্রোল সেল ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি নামে প্রেসিডেন্টের অধীনে একটি শীর্ষ প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়। সেখানে আর্মি থেকে প্রাথমিকভাবে যে চারজন অফিসারকে নিয়োগ দেওয়া হয় তার মধ্যে আমাকে রাখা হয়েছিলো। ব্যক্তিগতভাবে জে: জিয়া এই সেলের কাজ তত্বাবধান করতেন। বলতে গেলে এসব কারণে আমি সম্ভবত: ব্যক্তিগতভাবে জে: জিয়ার স্নেহভাজন এবং আস্থাভাজন হয়ে উঠেছিলাম।
১৯৭১ সালে দেশ পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হবার পর দেখা গেলো বাঁচিয়ে রাখতে হলে, অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মতো, ক্যাডেট কলেজগুলোরও পুনর্গঠন করা জরুরি। তখনকার ডেপুটি আর্মি চীফ জে: জিয়াকে ক্যাডেট কলেজগুলোর গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান নিয়োগ করে তাঁকে এই দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। জে: জিয়ার নির্দেশনায় প্রিন্সিপাল নিয়োগের জন্য একটি প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হয়। প্রক্রিয়া অনুযায়ী ক্যাডেট কলেজের প্রিন্সিপাল হবার যোগ্য এমন প্রার্থীদের নাম আর্মি, নেভী, এয়ার ফোর্স ও ক্যাডেট কলেজের সিভিলিয়ান শিক্ষকদের পক্ষ থেকে ডিফেন্স মিনিস্ট্রিতে পাঠানো হয়। সেবার তালিকাতে আমার নামও ছিলো। পরবর্তীকালে নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানতে পারি যে, নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ ক্যাডেট কলেজ কাউন্সিলের চেয়ারম্যন আমার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছিলেন বয়স কম হবার কারণে। কিন্তু জে: জিয়া এই বলে সে আপত্তি নাকোচ করে দিয়েছিলেন, Don’t worry. I know this boy. He will not let you down. যাঁদের জে: জিয়ার সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তাঁরা জানেন, জে: জিয়ার কথা এবং কাজের স্টাইলই এমন ছিলো।
১৯৬৩ সনে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৪ সন থেকে রেগুলার ক্যাডেট ভর্তি এবং ক্লাস শুরু হয়। তৎকালীন পাকিস্তান আর্মি এডুকেশন কোরের অত্যন্ত দক্ষ, মেধাবী এবং চৌকশ অফিসার লে: কর্নেল এন ডি হাসানকে প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাশ করা একঝাঁক অত্যন্ত মেধাবী ও ডেডিকেটেড যুবককে অতি যত্ন সহকারে নির্বাচন করে লেকচারার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। যাঁরা শুধু নিজনিজ একাডেমিক বিষয়ে ভালো জ্ঞান রাখতেন না, নানা প্রকার শিক্ষাসহায়ক (কো-কারিকুলার) বিষয়েও পারদর্শী ছিলেন। প্রত্যেকে বালকদের জন্য অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। এখানে উল্লেখ্য, তখন ক্যাডেট কলেজের একজন লেকচারের বেসিক পে, সরকারি কলেজ এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন লেকচারের বেসিক পে থেকে বেশি ছিলো। চাকুরির সুযোগ-সুবিধাও উন্নততর ছিলো। মুক্তিযুদ্ধের পর এসব পার্থক্য আর ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। কর্নেল হাসানের সুযোগ্য নেতৃত্বে শুরুতেই নবনিযুক্ত ফ্যাকাল্টি মেম্বররা এক অসাধারণ ট্রেন্ড সেট করতে, অর্থাৎ ধারা প্রবর্তন করতে, সমর্থ হন। ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের ইতিহাসে এঁদের অবদান স্বর্ণাক্ষরে চিরদিন লেখা থাকবে। যে কোনো প্রতিষ্ঠানের, বিশেষ করে তা যদি হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। তিনি শুরুতে ভালো বা মন্দ যে ট্রেন্ড সেট করবেন প্রতিষ্ঠানটিকে সেটাই অনেকদিন, এমনকি চিরদিন, বহন করতে হয়। কর্নেল হাসানের পর, কর্নেল রহমানসহ চারজন অত্যন্ত দক্ষ প্রিন্সিপাল আমার আগে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। এসব গুণী ব্যক্তিদের পর আমার মতো একজন অনভিজ্ঞ তরুনের প্রিন্সিপালের দায়িত্ব গ্রহণ সত্যিকার অর্থেই বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিলো।
ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্টের কথা উল্লেখ করার দাবি রাখে। তা হলো, চতুর্থ শ্রেণীর সর্বকনিষ্ঠ কর্মচারি থেকে শুরু করে প্রথম শ্রেণীর সর্বজ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পর্যন্ত, সকলে ব্যক্তিগতভাবে এবং সমষ্টিগতভাবে কলেজের প্রতি প্রচন্ডভাবে অনুগত ছিলেন। আমি দেখেছি, প্রিন্সিপালের সকল আদেশ তাঁরা কীভাবে শিরোধার্য মনে করে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে পালন করতেন।
কলেজটি প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত হবার কারণে বড় শহরের সামাজিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষতিকর প্রভাব ও ঝামেলা থেকে মুক্ত ছিলো। বেশিরভাগ ক্যাডেট আসতো গ্রামীণ অঞ্চল অথবা ছোটো মফস্বল শহর থেকে। ক্যাডেটদের এবং তাদের অভিভাবকদের মধ্যে একরকম গ্রামীণ সারল্য লক্ষ্য করে আমি মাঝেমাঝে হতবাক হয়ে যেতাম। যেমন, কোনো কোনো অভিভাবক প্রিন্সিপালের অফিসে ঢোকার সময় জুতা খুলে ঢুকতেন। আমি চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে হাত ধরে বারণ করার আগেই কাজটি করে ফেলতেন। ক্যাডেটদের অভিভাবকরা ছিলেন, শিক্ষিত-অশিক্ষিত এবং ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে, অত্যন্ত ভদ্র ও বিনয়ী। অপসন্দ হলেও কলেজ কর্তৃপক্ষের সকল আদেশ-উপদেশ হাসিমুখে পালন করতেন। তাঁরা বিশ্বাস করতেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ যা কিছু করছে তা সবই তাঁদের সন্তানের মঙ্গলের জন্য।
যে কারো জন্য ফার্স্ট টাইম প্রিন্সিপাল হিসেবে কাজ করার জন্য ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠন ছিলো। সে জন্য প্রিন্সিপাল হিসেবে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে প্রথম নিয়োগ পাবার জন্য আমি নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি। কলেজের সহকর্মীরা আমাকে অনেক ট্রিক্স অব দি ট্রেইড শিখতে সাহায্য করেছেন। যা বই পড়ে শেখা যায় না।
১৯৫০ দশকের শেষভাগে তৎকালীন পাকিস্তানে বৃটিশ পাবলিক স্কুলের আদলে ক্যাডেটট কলেজ স্থাপনের কাজ শুরু হয়। মূল উদ্দেশ্য ছিলো, ১১/১২ বছরের ছেলেদেরকে বোর্ডিং স্কুলের পরিবেশে রেখে ক্লাস সেভেন থেকে ক্লাস টুয়েলভ পর্যন্ত, অর্থাৎ এইচএসসি পযর্ন্ত শিক্ষাদান করা। সেইসাথে কিছু এলিমেন্টারি মিলিটারি ট্রইনিং দেওয়া, এবং নেতৃত্বের জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক কিছু গুণাবলী বিকাশে সহায়তা করা। যাতে পাশ করে ছেলেরা সশস্ত্রবাহিনীতে কমিশন্ড র্যাং কে যোগদানের জন্য উপযুক্ত এবং উৎসাহিত হয়। সেদিক থেকে বিচার করলে বলা যায়, বাংলাদেশের ক্যাডেট কলেজগুলো সর্বাংশে না হলেও অনেকাংশে সফল হয়েছে, এখনও হচ্ছে বলে আমি মনে করি। ক্যাডেট কলেজ থেকে পাশ করে একটি ছেলে (বা বর্তমানে মেয়েও) যদি সশস্ত্রবাহিনীতে যোগদান করতে আগ্রহী না হয় তা হলেও ক্ষতি নেই বলে আমি মনে করি। অন্য যেকোনো পেশাতেই সে যোগদান করুক না কেনো, সেখানে সে ক্যাডেট কলেজে অর্জিত গুণাবলী দ্বারা অন্যদের তুলনায় অধিকতর অবদান রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। যদি কেউ তা না পারে তবে সেটা ক্যাডেট কলেজের ব্যর্থতা নয়, তার ব্যক্তিগত ব্যর্থতা। সেজন্য অনেক কারণ থাকতে পারে।
পৃথিবীর অনেক দেশেই স্কুল পর্যায়ের ছেলেমেয়েদের জন্য ক্যাডেট কলেজের মতো রাষ্ট্র পরিচালিত উন্নত মানের স্কুল আছে। যেগুলোকে সেন্টার্স অব এক্সেলেন্স বলা হয়ে থাকে। আমি নিজে চীনদেশে এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেখেছি। অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশেও এমন ব্যবস্থা আছে বলে জেনেছি। রাষ্ট্র এবং সমাজ পরিচালনায় নেতৃত্ব প্রদান করা ডাফার বা অকর্মণ্যদের কাজ নয়। এজন্য দরকার মেধাবী, দক্ষ এবং দেশেপ্রমিক কর্মীর। যারা সকল ক্ষেত্রে যোগ্য নেতৃত্ব প্রদান করবে। এসব সেন্টার্স অব এক্সেলেন্সে ছেলেমেয়েদের নেতৃত্বের প্রয়োজনীয় গুনাবলী, ইংরেজিতে যাকে বলা হয় কোয়ালিটিজ অব হেড, হার্ট এন্ড হ্যান্ড, শিক্ষা দেওয়া হয়। বলে রাখা ভালো, এখানে নেতৃত্ব বলতে শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্ব বুঝায় না। যেকোনো পেশায় উৎকর্ষ অর্জনের জন্য প্রয়োজন সুযোগ্য নেতৃত্বের। যদি একমাত্র মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলের সন্তানের জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের দরজা সমানভাবে উন্মুক্ত রাখা হয়, তাহলে রাষ্ট্রীয় খরচে ক্যাডেট কলেজ পরিচালনাতে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। বাংলাদেশে কিছু লোক আছেন যাঁরা ক্যাডেট কলেজের কঠোর সমালোচনা করে থাকেন। এঁদের বেশিরভাগই বিত্তশালী ও শক্তিশালী, যাঁরা নিজেদের বিত্ত ও শক্তি দিয়ে বাংলাদেশে নিজ ইচ্ছামতো সব কিছু কিনতে পারেন বা করিয়ে নিতে পারেন। সুপারিশ বা অর্থের জোরে নিজ সন্তানের জন্য ভর্তির ব্যবস্থা করতে না পেরে এরা ক্যাডেট কলেজের সমালোচনা করেন। অন্য কিছু লোক আছেন যাঁরা নীতিগত প্রশ্ন তুলে ক্যাডেট কলেজের বিরোধিতা করেন। যাঁদের সমালোচনা, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অজ্ঞতাপ্রসূত। বহু বছর আগে, পাকিস্তান আমলে, একজন জ্ঞানী লোকের মুখে আমাদের একটি সামাজিক ব্যাধি সম্পর্কে একটা দামি কথা শুনেছিলাম। কথাটা বর্তমানে মনে হয় অধিকতর প্রযোজ্য। কথাটা হলো: Too many people talk too much on subjects they know too little.
আমি ১৯৭৮ সনের ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৮০ সনের মে মাসের প্রথম ভাগ পর্যন্ত ঝিনাইদহে দায়িত্ব পালন করি। সময়টা অল্প হলেও এ সময়ে বেশ কিছু ঘটনা ঘটে যা পাঠকের কাছে আকর্ষণীয় হতে পারে। সব ঘটনা তো বলা যাবে না। পরবর্তীত তার মধ্য থেকে কয়েকটি মাত্র উল্লেখ করার ইচ্ছা রাখি।
0 Comments:
Post a Comment
Subscribe to Post Comments [Atom]
<< Home